হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের লকার রুম থেকে চুরি হওয়া ৫৫ কেজি স্বর্ণ ভারতে পাচার হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন এ ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাই চুরি হওয়া স্বর্ণগুলো উদ্ধার হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে চুরির ঘটনায় ডিবি হেফাজতে নেওয়া শুল্ক বিভাগের দুই কর্মকর্তা ও এক সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। কাস্টম হাউসের ভল্ট থেকে চুরি হওয়া ৫৫ কেজির স্বর্ণের মধ্যে ৪৭ কেজি বাজেয়াপ্ত করা হলেও তা বাংলাদেশ ব্যাংকে না পাঠিয়ে ভল্টে অরক্ষিতভাবে রাখা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক বছরেও ভল্টে রাখা স্বর্ণের খোঁজখবর না নেওয়ায় পর্যায়ক্রমে চুরি হয়ে যায়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেয়াপ্ত করা স্বর্ণ ভল্টে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। যারা স্বর্ণগুলো ভল্ট থেকে সরিয়ে নিয়েছে তারা অল্প অল্প করে বিমানবন্দরের মতো প্রথম শ্রেণির কেপিআইভুক্ত স্পর্শকাতর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ভল্ট ভেঙে স্বর্ণগুলো গায়েব করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, চুরি হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। চুরি হওয়া স্বর্ণ সবই জলে গেছে। কারণ বেশি ওজন করে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০০ বা ২০০ গ্রাম করে স্বর্ণগুলো বছরের পর বছর ধরে চুরি করে নেওয়া হয়েছে। এসব স্বর্ণ দিয়ে হয়তো গহনা তৈরি করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আবার আলামত নষ্ট করতে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পাচার হয়ে থাকতে পারে।

এদিকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় হেফাজতে থাকা তিনজনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তারা মুখ খুলছেন না বলে জানিয়েছে তদন্তকারীরা। ফলে তাদের গ্রেফতারও দেখানো যাচ্ছে না। তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার রিমান্ডে নেওয়ার কথা থাকলেও এখনও তারা হেফাজতে রয়েছেন। তবে পুলিশ হেফাজতে ২৪ ঘণ্টার বেশি আসামি থাকার বিষয়েও আইনি জটিলতায় পড়ছেন তদন্তকারী ডিবি কর্মকর্তারা। অন্য একটি সূত্র জানায়, চুরি হওয়া স্বর্ণগুলো যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৫৫ কেজি স্বর্ণ বিভিন্ন সময় হাতবদল হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার হয়ে থাকতে পারে। এর পেছনে অনেক রাঘববোয়ালও জড়িত থাকতে পারে। যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বর্ণগুলো বিক্রি বা পাচার হয়েছে তাদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, তারা সাতজনকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন। তাদের মধ্যে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদারকে মঙ্গলবার রাতে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বুধবারও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহেদের বায়তুল মোকাররম ও পল্টনের পলওয়েল মার্কেটে যাতায়াত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় শাহেদের লোকেশন শনাক্ত করেছে ডিবি পুলিশ। শাহেদ ওই সময়ে ওই দুই মার্কেটে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হেফাজতে নেওয়া শুল্ক বিভাগের দুই কর্মকর্তা ও একজন সিপাহির কললিস্ট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাইয়ের পর সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হবে।

ডিবির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আকরামুল হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, আমরা শনাক্ত হওয়া তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এখনও তারা মুখ খুলছেন না। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তিনজনই এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে তাদের আসামি বলা যাবে না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোর্শেদ আলম সময়ের আলোকে বলেন, ‘অব্যবস্থাপনার কারণে যদি লকার রুমে কোনো দুর্ঘটনা ঘটত তা হলে আলামত রক্ষার অনেক উপায় ছিল। যখন সংরক্ষিত এবং নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা ভল্ট থেকে স্বর্ণ চুরি হয়, তখন বুঝতে হবে অবশ্যই ভেতরের কেউ জড়িত রয়েছে। যে তিনজন হেফাজতে রয়েছে তাদেরই আমরা প্রথমে শনাক্ত করি এবং হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ