ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মোঃ সৌরভ শেখ । শুধু সৌরভ শেখ নয়, ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছে শ্রীপুর অনেকেই। জৈব এই সার মাটিকে তাজা করে, নেই কোনো ক্ষতিকর দিক, দামেও সস্তা তাই কৃষকেরও পছন্দ এই সার।

মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার আমলসার ইউনিয়নের ছোট উদাস গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সৌরভ শেখ। প্রথমে তিনি নিজ উদ্যেগে কাজ শুরু করে। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০২৩ সালে তিনটি রিং স্লাব দিয়ে শুরু। ধীরে ধীরে সার উৎপাদনের পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন রিং স্লাবে সীমাবদ্ধ নেই । বাড়ির উঠানে বিশাল টিনের সেড ও আরেক পাশে ছাপড়া বানিয়ে তৈরি করেছেন ১৪টি রিং।

প্রতিটি রিংয়ে ২-৩ মণ গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছের টুকরার মিশ্রণ করে প্রতিটি হাউজে ১০কেজি কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে হাউজ ঢেকে রাখা হয়। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। এই ভাবে প্রতি মাসে মোঃ সৌরভ শেখের ১৪টি রিং বা চাড় থেকে আটাশ থেকে ত্রিশ মণ সার উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি সার খুচরা ১৫ টাকা ও পাইকারি ১২টা করে বিক্রি করা হয়। এতে খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এদিকে সৌরভের উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চাষিরা এসে সৌরভ শেখের বাড়ি থেকে সারা কিনে নিয়ে চাষাবাদ করছেন।এছাড়াও সৌরভ শেখ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি এই সার দিয়ে উৎপাদন করছেন। তা বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারকারী চাষি রাশেদ ইসলাম বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার জমির উর্বরতা বাড়ায়, ফলনও বেশী হয়। এছাড়া দামও কম। আর রাসায়নিক সারের দাম বেশী ও ক্ষতিকারক। এজন্য আমরা এখন জৈব সার ভার্মি কম্পোস্ট সৌরভ থেকে কিনে জমিতে ব্যবহার করছি। ফলে অল্প খরচে অধিক লাভবান হচ্ছি।

উদ্যোক্তা মোঃ সৌরভ শেখ বলেন, সার বিক্রি করে আমি মাসে আয় করছি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সারের চাহিদা থাকায় দিন দিন উৎপাদন বাড়িয়েছি। আর আমার সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই আমার কাছ থেকে সার উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করছেন। তারাও আগামীতে ভার্মি কম্পোস্ট সারা উৎপাদন করবেন। তবে সরকারি সহযোগিতা দরকার।

তিনি আরও বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে আমি বেশ লাভবান হয়েছি। প্রতি কেজি সার ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আমি প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা বাড়িতে বসে আয় করতে পারি। এখন আগের থেকে আমার পরিবার সচ্ছল হয়েছে এবং আমার দেখাদেখি এলাকার আরও অনেকে এই কাজ শুরু করেছেন। তারাও ভাল করছেন। আগে অনেকে বেকার ছিল, তারা এই সার উৎপাদন করে বর্তমানে ভাল আয়-রোজগার করছেন।’
আর কৃষি বিভাগ বলছে এই সার উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়ে সবধরনের সহযোগিতা করছে তারা।
শ্রীপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন জানান, বর্তমানে রাসায়নিক সারের অতিব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশবান্ধব এই কম্পোস্ট মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। এই কম্পোস্ট ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কৃষি অফিস এই ধরনের উদ্যোগে যাবতীয় উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও কেঁচো দিয়ে পরিবেশবান্ধব কম্পোস্ট উৎপাদনে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা বলেন, কেঁচো দিয়ে সার উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় প্রায় ১০০ কৃষক এই সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে রাসায়নিক সারের অতিব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এই সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।আমরা সবসময় তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ