মহান আল্লাহ দৃশ্য-অদৃশ্যের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক। আল্লাহ চাইলে অলৌকিক যেকোনো জিনিস ঘটাতে পারেন। তেমনি তাঁর কিছু সৃষ্টিকেও রেখেছেন অদৃশ্য করে, তাদের কিছু অদৃশ্য শক্তিও দিয়েছেন তাদের ও মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। স্বভাবতই মানুষ অদৃশ্য শক্তির প্রতি দুর্বল। তাই আল্লাহ বিভিন্ন সময় নবীদের দিয়েও অলৌকিক অনেক কিছু ঘটিয়েছেন।

যেমন হজরত মুসা (আ.)-এর হাতে লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, হজরত দাউদ (আ.)-এর হাতে লোহা মোমের মতো গলে যাওয়া, হজরত সুলাইমান (আ.)-এর বাতাসে চলতে পারা ও সব প্রকার জীবজন্তুর ভাষা বুঝতে পারা, হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মান্ধ ব্যক্তিকে হাত বুলিয়ে ভালো করে ফেলা, হজরত সালেহ (আ.)-এর পাহাড়ের ভেতর থেকে উট বের হওয়া, আমাদের নবীজি মুহাম্মাদ (সা.)-এর হাতের ইশারায় চাঁদ দ্বিখ-িত হওয়া, নামাজের মধ্যে শয়তানকে ধরে ফেলা, একটি বকরি ও সামান্য জবের রুটি দিয়ে হাজার সাহাবিদের তৃপ্তিভরে খাওয়ানো, খেজুরের ঢাল তরবারিতে পরিণত হওয়া, সামনে থেকে পেছনেও সমানভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারা, এক রাতেই সাত আসমান অতিক্রম করে সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত-জাহান্নাম, লৌহ-কলম সবকিছু ভ্রমণ করে চলে আসা ইত্যাদি। এসব বিষয় কখনোই কোনো সাধারণ মানুষ থেকে প্রকাশিত হবে না। এগুলোকে বলা হয় মুজিযা। নবী-রাসুলগণের মুজিযায় বিশ্বাস রাখা ঈমানের অংশবিশেষ।

তবে জাদুর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদিও জাদুকরের জাদু দেখতে অলৌকিক মনে হয় এবং মানুষকে সাধারণত অক্ষম করে দেয়। কিন্তু জাদুবিদ্যা, সাধারণত ধোঁকাবাজি ও ভেলকিবাজি হয়ে থাকে। আর তা কাফের-মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য। জাদুবিদ্যা শিক্ষা করা, কাউকে শিক্ষা দেওয়া, জাদু বিশ্বাস করা সরাসরি কবিরা গুনাহ ও ঈমান বিধ্বংসী কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু হতে বেঁচে থাকো। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? তিনি বলেন-১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা। ২. জাদু করা। ৩. হক পন্থা ব্যতীত কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা। ৪. সুদ খাওয়া। ৫. এতিমের মাল খাওয়া। ৬. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ও ৭. সতী-সাধ্বী, সরলা মুমিন নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।’ (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারায় হারুত-মারুত নামক দুই ফেরেশতার ব্যাপারে বলেছেন, ‘তারা উভয়ই এ কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা নিছক একটি পরীক্ষা মাত্র; কাজেই তুমি কুফরি করো না। তা সত্ত্বেও তারা ফেরেশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো যায়। অথচ তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দিয়ে কারও অনিষ্ট করতে পারত না। এতদসত্ত্বেও তারা তাই শিখত যা তাদের ক্ষতি করত এবং কোনো উপকারে আসত না। তারা ভালোভাবে জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে (অর্থাৎ জাদুর আশ্রয় নেয়) তার জন্য আখেরাতে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত’ (সুরা বাকারা : ১০২)।

এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, জাদু বিদ্যা কুফরি এবং জাদুকররা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। আয়াতটি দ্বারা আরও প্রমাণিত যে, জাদু ভালো-মন্দের আসল কার্যকারণ নয়, বরং আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত জাগতিক নিয়ম ও নির্দেশেই মূলত তা প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম তত্ত্বাবধায়ক।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ