বগুড়ার নন্দীগ্রামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিফা নুসরাতকে প্রত্যাহার ও বদলির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরধরে সাংবাদিকের কর্তব্য কাজে বাধা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ। ইউএনওর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে সরকারি দপ্তরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করে উত্তেজিত ওই চেয়ারম্যান বলে ওঠেন, ‘বের হন! এখান থেকে বের হন! যে যে সাংবাদিক সরকারি অনুষ্ঠানে আসতে পারবে না বলেছি, তারা এসেছে কেন? আরেকজন বলে ওঠে, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে ওরা ইউএনওর বিরুদ্ধে লিখতো না। এ ঘটনার নিন্দা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের অনুষ্ঠানে দৈনিক মুক্তসকাল স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক আব্দুল বারীকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। কর্তব্য পালনকালে বাধা দিয়ে ওই সাংবাদিককে মৎস্য সপ্তাহের অনুষ্ঠান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে বখরা আদায়, অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উসকে দেয়া ও সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি ইউএনও শিফা নুসরাতের অপসারণ দাবিতে সাংবাদিক ও জনসাধারণের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছিলো। গত ১২ জুলাই ওই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার ও বদলি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কমকর্তা বেগম শিফা নুসরাতকে (সিনিয়র সহকারী সচিব) বর্তমান পদ ও কর্মস্থল নন্দীগ্রাম হতে প্রত্যাহারপূর্বক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বিআরটিএ ঢাকা পদে পদায়নের লক্ষ্যে তার চাকরি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। ইউএনওকে প্রত্যাহার ও বদলির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সাংবাদিক আব্দুল বারীক জানান, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ইউএনও শিফা নুসরাতকে উসকে দিয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নাহ এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম। গত সোমবার উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রকাশিত সংবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি সাংবাদিকদের উপজেলার কোনো সরকারি দপ্তরে ঢুকতে দেবেন না বলেও ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের অনুষ্ঠান চলাকালে উপজেলা পরিষদের পুকুরে পোনামাছ অবমুক্ত করার সময় সাংবাদিকরা ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন। এসময় হঠাতই সাংবাদিক আব্দুল বারীকের উপর চড়াও হন উপজেলা চেয়ারম্যান। কর্তব্য পালনকালে বাধা দিয়ে ওই সাংবাদিককে মৎস্য সপ্তাহের অনুষ্ঠান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, যারা ইউএনওর বিরুদ্ধে লিখেছে, তাদেরকে সাংবাদিক মানিনা। এজন্য তাদেরকে সরকারি দপ্তরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. হাকিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেন বলেন, সাংবাদিকের সঙ্গে এমন আচরণের ঘটনাটি দুঃখজনক।

পোস্টটি শেয়ার করুনঃ